আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থার (ইউসি সিস্টেম) বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা হিসেবে ১ বিলিয়ন ডলার জরিমানার দাবি জানিয়েছেন।
শনিবার (৯ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে এনডিটিভি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই জরিমানার পরিমাণ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুরূপ অভিযোগে গৃহীত সমঝোতা চুক্তির পাঁচ গুণ বেশি। কলম্বিয়া ২০০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে মামলা মিটিয়েছে। ইউসি সিস্টেমের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, এই অঙ্ক ‘পুরো ক্যালিফোর্নিয়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিতে পারে।’
ইউসি সিস্টেমের প্রেসিডেন্ট জেমস মিলিকেন, যিনি ১০টি ক্যাম্পাসের তত্ত্বাবধান করেন, শুক্রবার জানিয়েছেন, তারা ১ বিলিয়ন ডলারের দাবি পেয়েছেন এবং বিষয়টি পর্যালোচনা করছেন।
তিনি বলেন, ‘একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমরা করদাতাদের সম্পদের দায়িত্বশীল রক্ষক। এই মাত্রার অর্থ প্রদান আমাদের দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাকে ধ্বংস করবে এবং আমাদের শিক্ষার্থীসহ পুরো ক্যালিফোর্নিয়াবাসীর জন্য মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনবে।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘আমেরিকার জনগণ ইউসিএলএ ও ইউসি সিস্টেমের ওপর নির্ভর করে এমন প্রযুক্তি ও চিকিৎসা উদ্ভাবনের জন্য যা জীবন রক্ষা করে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি বৃদ্ধি করে এবং জাতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখে।’ গণমাধ্যমের তথ্যমতে, সরকার এই অর্থ কিস্তিতে নেওয়ার পাশাপাশি ইহুদি শিক্ষার্থী ও বৈষম্যের শিকার অন্যান্যদের ক্ষতিপূরণের জন্য ১৭২ মিলিয়ন ডলার আলাদা দাবির তহবিলে জমা দিতে বলেছে।
এই পদক্ষেপটি অনেকটা কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রশাসনের চাপ প্রয়োগ কৌশলের পুনরাবৃত্তি, যা বর্তমানে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও প্রয়োগের চেষ্টা চলছে। কলম্বিয়ার সঙ্গে হওয়া চুক্তিতে জাতি-ভিত্তিক ভর্তি বা নিয়োগের বিরুদ্ধে নিয়ম মানার প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত ছিল।
২০২৪ সালে কলম্বিয়া থেকে ইউসিএলএ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের অসংখ্য ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, যেগুলোতে পুলিশি দমন-পীড়ন ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। সে সময় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, ‘শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।’
হোয়াইট হাউসে ফেরার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ট্রাম্পের নজরদারির আওতায় রয়েছে। তার ‘মেইক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন” (মাগা) আন্দোলন শিক্ষাঙ্গনকে অভিজাত, অতিমাত্রায় উদারপন্থি ও ট্রাম্প সমর্থকদের জনপ্রিয় জাতীয়তাবাদী ভাবনার প্রতি শত্রুভাবাপন্ন বলে মনে করে।
১ বিলিয়ন ডলারের এই দাবি এসেছে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজমের বক্তব্যের একদিন পর। ট্রাম্পের সঙ্গে নিয়মিত রাজনৈতিক বিরোধে থাকা নিউজম ইউসিকে এই দাবির কাছে নতি স্বীকার না করার আহ্বান জানিয়েছেন।
নিউজম বলেছেন, ‘এখানে সঠিক ও ভুলের প্রশ্ন রয়েছে, আর আমরা সঠিক কাজটাই করব। এটি আমাদের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা, দেশের ভবিষ্যৎ, আমাদের সার্বভৌমত্ব—সব কিছুর সঙ্গে জড়িত। এটি কেবলমাত্র বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত রাগ-অভিমান নয়।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমি আমার ক্ষমতার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করব যাতে তারা সঠিক পথ বেছে নেয়—না যেন আরেকটি আইনজীবী প্রতিষ্ঠান হয়, যা হাঁটু গেড়ে বসে; না যেন এমন আরেকটি প্রতিষ্ঠান হয়, যা আত্মা বিক্রি করে দেয় কিংবা সহজ ভুলের পথ বেছে নেয়, কঠিন হলেও সঠিক পথে না গিয়ে।’
আয়শা/৯ আগস্ট ২০২৫/সন্ধ্যা ৬:০৫