আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে সরাসরি বসতে প্রস্তুত, যদিও পুতিন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা না করলেও তিনি এ সাক্ষাৎকারে আগ্রহী।
মস্কোকে শুক্রবার পর্যন্ত ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে বলেছেন ট্রাম্প, না হলে নতুন কঠোর নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হবে রাশিয়া। তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেননি এ সময়সীমা এখনও বলবৎ আছে কি না।
‘এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন (পুতিন),’ বলেন ট্রাম্প। ‘তার বক্তব্য আমরা দেখতে পাব।’গত জানুয়ারি থেকে হোয়াইট হাউজে ফেরার পর থেকে ট্রাম্প রাশিয়াকে ইউক্রেনে তাদের সামরিক অভিযান শেষ করার জন্য চাপ দিচ্ছেন।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, পুতিন ও ট্রাম্প ‘আসন্ন দিনগুলোতে’ একটি শীর্ষ বৈঠকে বসবেন, তবে সেখানে জেলেনস্কির অন্তর্ভুক্তি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন রাশিয়ার নেতা। অন্যদিকে, জেলেনস্কি শুক্রবার জোর দিয়েছেন যে, কোনো আলোচনায় তার অন্তর্ভুক্তি অবশ্যক।
এদিকে ট্রাম্পকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, পুতিন কি শীর্ষ বৈঠকের আগে জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করবে কি না, তিনি শুধু উত্তর দেন, ‘না, করার প্রয়োজন নেই।’পুতিন সংযুক্ত আরব আমিরাতকে সম্ভাব্য বৈঠকস্থল হিসেবে উল্লেখ করেছেন, তবে ওয়াশিংটন তা নিশ্চিত করেনি।
পরবর্তী সপ্তাহে?
যদি বৈঠক হয়, তবে এটি হবে ২০২১ সালের জুনে জেনেভায় জো বাইডেন ও পুতিনের বৈঠকের পর প্রথমবারের মতো আমেরিকা ও রাশিয়ার বর্তমান দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে মুখোমুখি আলোচনা।
ইস্তানবুলে তিন দফা সরাসরি রাশিয়া-ইউক্রেন আলোচনা পরিশেষে যুদ্ধবিরতির কোনো অগ্রগতি আসেনি। দুই পক্ষই নিজেদের দাবি থেকে সরে আসেনি।
ট্রাম্প ও পুতিন শেষ দেখা করেছিলেন ২০১৯ সালে জাপানে জি২০ সম্মেলনে, এরপর থেকে বেশ কয়েকবার ফোনালাপ করেছেন।
ক্রেমলিনের উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ জানিয়েছেন, ‘পরবর্তী সপ্তাহই লক্ষ্য তারিখ হিসেবে নির্ধারিত’, তবে বৈঠকের সময় ও স্থান নিশ্চিত করেননি।
হোয়াইট হাউজ পরে জানায়, কোনো নির্দিষ্ট স্থান ঠিক হয়নি, তবে বৈঠক ‘পরবর্তী সপ্তাহেও হতে পারে’।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনে ইউক্রেনে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, লাখ লাখ বাসস্থান ছেড়ে পালিয়েছে।
পুতিন যুদ্ধবিরতি চেয়ে আসা বহু আন্তর্জাতিক আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ইস্তানবুল আলোচনায় রাশিয়ান প্রতিনিধিরা কড়া ভূ-রাজনৈতিক দাবি তুলেছিলেন, যেখানে ইউক্রেনকে কিছু ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে ও পশ্চিমা সামরিক সাহায্য প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছিল।
‘যুদ্ধ শেষের সময় এসেছে’
বৈঠকের সম্ভাবনার খবর আসে, যখন মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বুধবার মস্কোয় পুতিনের সঙ্গে দেখা করেন।
উইটকফ জেলেনস্কির সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের প্রস্তাব দেন, তবে পুতিন সরাসরি জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনা নিষিদ্ধ করে বলেন, ‘নির্দিষ্ট কিছু শর্ত তৈরি হওয়া দরকার, যা এখনও হয়নি।’
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে রাশিয়ার ক্ষমতায় থাকা সাবেক কেজিবি এজেন্ট পুতিন জুনে বলেছিলেন, যুদ্ধের ‘চূড়ান্ত পর্যায়ে’ জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করতে রাজি আছেন।
জেলেনস্কি বৃহস্পতিবার তার নিয়মিত ভাষণে বলেন, ‘যুক্তিসঙ্গত যে, ইউক্রেন আলোচনায় অংশগ্রহণ করবে।’
তিনি ফ্রান্স, জার্মানি ও ইউরোপীয় কমিশনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ইউরোপকে শান্তি আলোচনা প্রক্রিয়ায় যুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি সামাজিক মাধ্যমে বলেন, ‘ইউক্রেন ইউরোপের অংশ, আমরা ইতোমধ্যেই ইইউ সদস্যপদে আলোচনায় রয়েছি, তাই ইউরোপকেই এই প্রক্রিয়ার অংশ হতে হবে’।
সুরক্ষা বিষয়ক পরামর্শকরা বৃহস্পতিবার অনলাইন বৈঠক করবেন তাদের অভিন্ন মতের সমন্বয়ের জন্য।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করেন, ‘ইউক্রেন বৈঠক থেকে ভয় পায় না, আশা করি রাশিয়া পক্ষও সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসবে। এখনই যুদ্ধ শেষ করার সময়।’
আয়শা/৮ আগস্ট ২০২৫/রাত ১১:০৮