ডেস্ক নিউজ : খানা-খন্দ আর ছোট-বড় গর্তে ভরা ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌরসভা। প্রথম শ্রেণির এ পৌরশহরে বিগত সরকারের আমলে দফায় দফায় বেড়েছে পৌর কর, ট্রেড লাইসেন্সের ব্যয়। শুধু বাড়েনি পৌরসেবা। ১৯২৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এ পৌরসভার বর্তমানে সিংহভাগ সড়কের বেহাল দশা। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোতে পৌরবাসী চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
গৌরীপুর পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী আফজাল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আইওয়াইডিবি প্রজেক্টের অধীনে ২৮টি কোটি টাকার একটি প্রস্তাবনা দেওয়া হচ্ছে। এ প্রস্তাবনা অনুমোদিত হলে পৌর শহরের অধিকাংশ রাস্তা মেরামত ও সংস্কার হয়ে যাবে।
গৌরীপুর পৌরসভার প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুনন্দা সরকার প্রমা বলেন, প্রকল্পের জন্য ইতোমধ্যে প্রজেক্ট প্রস্তাবনা প্রেরণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি যেহেতু বড় একটু সময় লাগবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে পৌর শহরের প্রত্যেকটি সড়কের মেরামত ও সংস্কার করা সম্ভব হবে।
সরেজমিন দেখা যায়, শহরের শহীদ মঞ্জু সড়কের সিনেমা হল মোড় থেকে দি চাইল্ড ব্লোজম কিন্ডারগার্টেন পর্যন্ত রাস্তাটিতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। নতুনবাজার পর্যন্ত একাধিক স্থানে সৃষ্টি হয়েছে খানা-খন্দক। এ সড়কের পাশেই কিন্ডারগার্টেন ও নতুনবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়া এ সড়কটি রেলওয়ে জংশনে প্রবেশের অন্যতম ব্যস্ত সড়ক।
গৌরীপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ, আরকে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, নুরুল আমিন খান উচ্চ বিদ্যালয় ও পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী এ সড়কটি ব্যবহার করেন। ফল ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম বলেন, এ সড়কটিকে ঘিরে এখন কয়েকটি ফলের আড়ৎ রয়েছে। রাস্তাটি ভাঙা থাকায় আমরা চরম বিপাকে পড়ছি।
এদিকে পৌর শহরের ৭নং ওয়ার্ডের পাছেরকান্দা সড়কের একাধিক স্থানে খানা-খন্দকের সৃষ্টি হয়েছে। ইসলামাবাদ ফাজিল মাদরাসাটি দাখিল, আলিম, ফাজিল পরীক্ষার কেন্দ্র। অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ হলেও মাদরাসার সামনের সড়কটি ভেঙে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পাছেরকান্দা-বায়রাউড়া সড়কের শেষেপ্রান্তে ধসে গেছে। মাছুয়াকান্দা মসজিদের সঙ্গে পুকুরপাড়ে রাস্তায় যানবাহণ চলাচলে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা পরিষদের সামনে শহরের অন্যতম ব্যস্ত সড়ক হাতেম আলী আইটি সড়কটি।
সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের সিংহভাগ কাজের জন্য উপজেলার সর্বস্তরের লোকজনকে এ সড়কে আসতে হয়। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অত্যাবশ্যকীয় সড়ক হলো এটি। এ সড়কে সামান্য বৃষ্টি হলেই হাঁটুপানি জমে।
বিজয় টেলিকমের স্বত্বাধিকারী তৌহিদুল আমিন তুহিন বলেন, সড়ক মেরামত এবং পানি চলাচলের জন্য ড্রেনেরও প্রয়োজন।
স্বজন মিডিয়া সেন্টারের শামীম আনোয়ার বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই পাটবাজারের এপাশের সব পানি সড়কের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে রাস্তাটি মেরামতের পরপরই দ্রুত ভেঙে যায়।
অপরদিকে গৌরীপুর-শাহগঞ্জ সড়কের বালুয়াপাড়া মোড়ে বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ছোট-বড় ৩৪টি গর্ত রয়েছে ব্রিজ পর্যন্ত।
এ সড়কটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের হলেও এলাকাবাসী জানান, জনদুর্ভোগ থেকে বাঁচাতে দ্রুত মেরামত প্রয়োজন। গৌরীপুর সরকারি কলেজের সড়কটিরও বেহাল। কলেজ থেকে কৃষ্টপুর হয়ে সরকারপাড়াগামী রাস্তাটি অসমাপ্ত ও ভাঙাচোরা, খানা-খন্দকের কারণে যানবাহন চলাচল করতে পারছে না।
শান্তিবাগের সড়কেও শান্তি নেই এলাকাবাসীর। মূল সড়ক থেকে সরকারি কলেজ পর্যন্ত সড়কটি বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের সামনে থেকে শান্তিবাগ সড়কেও পানি উঠে। খানা-খান্দকের কারণে জনদুর্ভোগ বেড়েছে।
এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর সামনে থেকে পশ্চিম ভালুকার সড়কে পথচারী ও যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সাবেক পৌর কমিশনার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হান্নানের বাসা থেকে পুরো রাস্তাটি অচল। কলাবাগান সড়কে বড় গর্তের কারণে যানবাহন চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
কলাবাগানের কবি সেলিম আল রাজ বলেন, রাস্তাটির সঙ্গে ড্রেনের সংযোগ না থাকায় পানি সরছে না। রাস্তাটি পুকুরে পরিণত হয়েছে। কালিপুর থেকে খেলার মাঠ সড়কটির কাপের্টিংও উঠে গেছে। গৌরীপুর-কলতাপাড়া সড়কের সতিষা মসজিদ থেকে সতিষা খালপাড়গামী সড়কের চানু মিয়া বাসার সামনে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
সতিষা খালপাড় মোড় থেকে শেষপ্রান্ত পর্যন্ত রাস্তাটি ভাঙা ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সতিষা বিলপাড়া থেকে পূর্বদাপুনিয়া ব্রিজ পর্যন্ত সিসি ঢালাই রাস্তাটির আস্তরণ উঠে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত তৈরি হয়েছে। গোলকপুর মোড় থেকে গোলকপুরের শেষপ্রান্ত পর্যন্ত সড়কটি ভাঙা।
কিউটিভি/আয়শা/২৯ জুলাই ২০২৫,/সন্ধ্যা ৭:৫০