আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম প্রার্থী জোহরান মামদানি বিজয়ী হলে স্বয়ং হোয়াইট হাউস থেকে শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় ভোটের প্রতি এমন হস্তক্ষেপমূলক বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যবস্থার মৌল নীতিমালার পরিপন্থী বলে বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন।
তবে ট্রাম্প যাকে কমিউনিস্ট বলে অভিহিত করছেন—জোহরান মামদানি—তিনি আদতে একজন ডেমোক্রেটিক সোশালিস্ট। তিনি মার্কিন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স এবং কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজের মতো বামপন্থী রাজনীতিকদের আদর্শে অনুপ্রাণিত। মামদানি নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির নির্বাচিত সদস্য এবং শহরের আবাসন সংকট, গৃহহীনতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও পরিবেশ রক্ষার মতো বিষয়গুলো নিয়ে সোচ্চার।
ট্রাম্প মামদানিকে নিয়ে আরও বলেন, এই লোকটির তেমন কোনো যোগ্যতা নেই, শুধু ভালো বুলি আওড়াতে পারে। এমনকি, কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়াই মামদানির নাগরিকত্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি—যা পূর্বে প্রেসিডেন্ট ওবামার জন্মস্থান নিয়ে গঠিত ‘বার্থার’ ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ধারাবাহিকতা বলে মনে করছেন অনেকে।
ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, নিউইয়র্কে তার পছন্দের বাইরে কেউ মেয়র হলে তিনি ১৮০৭ সালের ‘ইনসারেকশন অ্যাক্ট’ প্রয়োগ করতে পারেন, যার আওতায় বিদ্রোহ বা বিশৃঙ্খলার সময় ফেডারেল সেনা মোতায়েন করা যায়। যদিও কেবলমাত্র রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে এই আইন প্রয়োগের কোনো ইতিহাস নেই।
আইনি বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্টের পক্ষে কোনো শহরের নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে দেওয়ার সাংবিধানিক ক্ষমতা নেই। ব্রেনান সেন্টার ফর জাস্টিস-এর প্রেসিডেন্সিয়াল পাওয়ার বিশেষজ্ঞ এলিজাবেথ গয়েটিন বলেন, কোনো শহরের নির্বাচিত মেয়র অপছন্দ হলেও প্রেসিডেন্টের পক্ষে তাকে বাতিল করার আইনি সুযোগ নেই। নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডোমিঙ্গো মোরেলের মতে, ট্রাম্প মূলত নিউইয়র্কবাসীর উদ্দেশে এই বার্তাই দিচ্ছেন—তোমরা কাকে ভোট দেবে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের পছন্দ না হলে আমরা হস্তক্ষেপ করব।
বিশ্লেষকেরা আশঙ্কা করছেন, ট্রাম্পের বক্তব্য নিছক রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে, তবে অতীতে তার আচরণ বলছে, এ ধরনের হুমকিকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। তিনি প্রেসিডেন্সিতে থাকাকালীন নির্বাহী আদেশে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সীমান্ত দেয়ালের জন্য সামরিক বাজেট পুনর্নির্দেশ করেছিলেন এবং অভিবাসন নীতিতে রাজ্য সরকারগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ করেছিলেন।
অন্যদিকে, মামদানি তার অবস্থানে অনড় রয়েছেন। নিউইয়র্কের তৃণমূল রাজনৈতিক আন্দোলনের অন্যতম মুখ হয়ে ওঠা এই তরুণ নেতা গৃহহীনদের অধিকার, ভাড়াটিয়াদের নিরাপত্তা এবং কর কাঠামোয় ধনীদের ওপর চাপ বাড়ানোর পক্ষে সোচ্চার। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায়ও তার সক্রিয় অবস্থান তাঁকে তরুণ ভোটারদের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছে।
কিউটিভি/আয়শা//১৩ জুলাই ২০২৫,/দুপুর ২:৫২