ডেস্ক নিউজ : জাতিসংঘ ঘোষিত নির্যাতনের শিকারদের সমর্থনে আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জানিয়েছেন। তিনি রাষ্ট্রীয় নির্যাতন বন্ধ এবং এর শিকার ব্যক্তিদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু বন্ধ করারও আহ্বান জানিয়েছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আবহমানকাল ধরে দেশে দেশে মানুষ অত্যাচারী শাসক, বর্বর একনায়ক এবং একদলীয় শাসকের দ্বারা দমন-পীড়নের শিকার হয়ে আসছে। বিশ্বজুড়ে রক্তপিপাসু স্বৈরশাসকরা বিশ্ব শান্তি, নিরাপত্তা, গণতন্ত্র, মানবমুক্তি ও প্রগতির আদর্শকে ভয়ানক নিষ্ঠুরতায় ভূলুণ্ঠিত করেছে। আজও দুনিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ভাষা, বর্ণ, জাতি ও সম্প্রদায় নিয়ে চলছে হিংসা ও সংঘাতের রক্তক্ষরণ।
‘বেআইনি ক্ষমতাবানরা অনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের জন্য সমাজে চালাচ্ছে রক্তারক্তি ও হানাহানি। রাষ্ট্রের অমানবিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে মানুষ নানাভাবে দমন-পীড়নের শিকার হচ্ছে। বিশ্ব যান্ত্রিক সভ্যতায় এগিয়ে গেলেও মানবিক সভ্যতা বেশিদূর এগোতে পারেনি’।
তার ভাষায়, গত বছর জুলাই-আগষ্টের গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের বীভৎস দমন নীতির কারণে অসংখ্য প্রাণ ঝরে গেছে এবং হাজার হাজার ছাত্র-জনতা পঙ্গুত্ববরণ করেছে। বিগত নিষ্ঠুর ও কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী সরকারের উৎপীড়নের বিকট রূপ দেখে সারাবিশ্ব হতভম্ব হয়েছে। এছাড়াও ১৬ বছর ধরে তাদের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের কারণে গুম, কথিত বন্দুকযুদ্ধে হত্যা, শারীরিক নির্যাতনে মৃত্যুর শিকার হয়েছে অসংখ্য মানুষ।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের জনগণের নিকট কোনো জবাবদিহিতা ছিল না, সকল প্রতিষ্ঠানকে হাতের মুঠোয় নিয়ে একদলীয় দুঃশাসনের জগদ্দল পাথর জনগণের বুকের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। গণমাধ্যমকে হুমকি, ভয় ও নির্যাতন চালিয়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে নির্মমভাবে মাটিচাপা দেয়া হয়েছিল। আর বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী নেতাকর্মীদের ওপর চালানো হয়েছে বেপরোয়া জুলুম-নির্যাতন। সারাদেশের মানুষ যেন ভয়াবহ নৈরাজ্যের অন্ধকারে বাস করেছে।
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, জুলুম-নির্যাতনের ধারাবাহিকতায় গণতন্ত্রের সর্বশেষ চিহ্নকে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী মুছে ফেলেছিল। ‘গণতন্ত্রের মা’ বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অসত্য বানোয়াট মামলায় আক্রোশমূলকভাবে ফরমায়েশি রায়ে সাজা দিয়ে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। তাঁকে নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতন করা হয়। কারাবন্দি অসুস্থ দেশনেত্রীকে সুচিকিৎসা না দিয়ে তাঁর জীবনকে সংকটাপন্ন করে তোলা হয়। রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের এ ধরনের দৃষ্টান্ত সহজেই খুঁজে পাওয়া যায় না।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু বন্ধ করতে হবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেছেন, আমি নির্যাতিতদের সমর্থনে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক দিবসে সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের শিকার ব্যক্তি ও তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের প্রতিকার প্রাপ্তি এবং ন্যায্য ও পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের একটি ন্যায়সংগত অধিকার বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হোক। আমি গণতন্ত্রকামী সংগ্রামী জনগণকে যুথবদ্ধভাবে সব নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু বন্ধ করতে হবে। বিদ্যমান দায়হীনতা ও দায়িত্বশীলদের কর্তব্যে অবহেলা বন্ধ করতে হবে।
কিউটিভি/আয়শা//২৫ জুন ২০২৫, /বিকাল ৫:১২