এই ধারার মাধ্যমে চুক্তির যেকোনো পক্ষ ইরানকে ‘অমান্যকারী’ ঘোষণা করে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের অনুরোধ জানাতে পারবে। ইউরোপের দেশগুলোর অভিযোগ, ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে।
আর এই অভিযোগের ভিত্তিতেই তারা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে স্ন্যাপব্যাক মেকানিজম চালু করার ব্যাপারে সক্রিয় হয়েছে। যা চলতি আগস্ট মাসের মধ্যেই কার্যকর হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত শুক্রবার (২২ আগস্ট) ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। ফোনালাপের পর টেলিগ্রামে এক বিবৃতিতে আরাঘচি স্ন্যাপব্যাক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালে ইউরোপীয় দেশগুলোর ‘আইনি ও নৈতিক অবস্থান’ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তবে আলোচনা অব্যাহত রাখার কথাও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান যেমন আত্মরক্ষায় দৃঢ় অবস্থান নেয়, তেমনি কখনও কূটনীতির পথ ছাড়েনি। ইরানি জনগণের অধিকার ও স্বার্থ নিশ্চিত করে এমন যেকোনো সমাধানের জন্য ইরান প্রস্তুত।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-নোয়েল বারো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আগামী সপ্তাহে আরেক দফা আলোচনা হবে। তার কথায়, ‘আমরা ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ফোনালাপ করেছি। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ও নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের প্রস্তুতি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। ‘সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।‘
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ভাডেফুলও এক্স-এ এক বার্তায় বলেন, ‘সময় খুবই কম। ইরানকে অর্থবহভাবে আলোচনায় যুক্ত হতে হবে, নইলে স্ন্যাপব্যাক কার্যকর হয়ে যাবে। যাচাইযোগ্য ও টেকসই সমঝোতা না হলে আমরা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সময়সীমা শেষ হতে দেব না।’
এদিন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গেও কথা বলেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ফোনালাপে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ইরানের বিরুদ্ধে পুরোনো নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করার কোনো নৈতিক বা আইনগত অধিকার ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির নেই বলে জানান তারা।
এই দুই কূটনীতিক বলেন, ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো নিজেরাই ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে চুক্তি থেকে সরে গিয়ে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর ইউরোপের দেশগুলো ওয়াশিংটনের পথ অনুসরণ করেছে।
পরমাণু ইস্যুতে গেল জুনে ইসরাইলের সঙ্গে এক দফায় সংঘাত হয়েছে ইরানের। ওই সংঘাতে নিজেদের অত্যাধুনিক সব অস্ত্রের শক্তিমত্তা দেখিয়েছে ইরানি বাহিনী। তবে শত্রুদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর বার্তার হুঁশিয়ারি দিয়েছে দেশটি।
স্থানীয় সময় শুক্রবার এক সাক্ষাৎকারে ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদেহ বলেন, শত্রুরা আগ্রাসন চালালে ইরান এবার এমন সব অস্ত্র নিয়ে মাঠে নামবে যা তারা আগে কখনও ব্যবহার করেনি।
তার দাবি, ইরানের সার্জিক্যাল ক্ষেপণাস্ত্র এখনো যুদ্ধক্ষেত্রে মোতায়েন করা হয়নি। যেটির পাল্লা ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার। এটি নিখুঁতভাবে শত্রুর লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম উল্লেখ করে প্রতিপক্ষের ইলেকট্রনিক ও ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও এটিকে থামাতে পারবে না বলে দাবি ইরানের।
যুদ্ধের ময়দানের পাশাপাশি কূটনৈতিকভাবেও সংকট নিরসনের পক্ষে ইরান। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সর্বোচ্চ সচিব আলি লারিজানি কূটনীতিকে অন্যতম হাতিয়ার আখ্যা দিয়ে বলেন, বাস্তবসম্মত আলোচনা কেবল তখনই সম্ভব হবে যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ বুঝতে পারবে হুমকি ও যুদ্ধের ভয় দেখিয়ে ইরানকে দমানো যাবে না।
লারিজানির অভিযোগ, পশ্চিমা দেশগুলো কূটনীতিকে শুধু অজুহাত তৈরির জন্য ব্যবহার করছে। যদি সত্যিই তারা বোঝে যে যুদ্ধ অর্থহীন, তাহলেই আলোচনা ফলপ্রসূ হতে পারে।