স্পোর্টস ডেস্ক : ছবিটা ভালোভাবে লক্ষ্য করুন। এটা ভারতীয় ক্রিকেট দলের সিলেকশন প্যানেলের ছবি। এখানে অজিত আগারকার ছাড়া আপনি কয়জনকে চেনেন? কয়জন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কয়টা ছক্কা মেরেছেন? কয়জনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার ভিরাট কোহলি, রোহিত সরমা, সুরিয়া কুমার ইয়াদাভ বা জাসপ্রিত বুমরাহদের মতো সমৃদ্ধ? চলেন, একটু ডিপ অ্যানালাইসিস করি।
ভারতের সিলেকশন প্যানেল মূলত ৫ জনের। এই পাঁচজন ভারতের পাঁচটা ভিন্ন অঞ্চলকে প্রতিনিধিত্ব করেন। নর্থ, সাউথ, ইস্ট, ওয়েস্ট ও সেন্ট্রাল। তারা এভাবে বিষয়টাকে সেট করেছেন– নির্দিষ্ট অঞ্চলের সিলেক্টর যেহেতু সেই অঞ্চলের প্লেয়ারদের সম্পর্কে ভালো জানেন, তাদের পটেনশিয়ালিটি সম্পর্কে আইডিয়া রাখেন, তাই প্রত্যেকে তাদের নিজস্ব অঞ্চল নিয়েই কাজ ভাগ করে থাকেন। ফাইনাল ইভালুয়েশনের (চূড়ান্ত মূল্যায়ন) সময় উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম, কেন্দ্রের প্রত্যেকে প্রত্যেকের সাথে আর্গুমেন্ট করেন।
সিলেক্টর অজয় রাত্রার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার ৬ টেস্ট আর ১২ ওয়ানডের। কিন্তু তিনি ভারতের লেভেল থ্রি কোচদের মধ্যে অন্যতম। দীর্ঘদিন ভারতের বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের পাইপলাইন সিস্টেমের সাথে যুক্ত। তিনি ভারতের নর্থ জোনকে প্রতিনিধিত্ব করেন, সেখানকার প্লেয়ারদের সম্পর্কে তার সম্যক ধারণা আছে এবং সেই অঞ্চল থেকে প্লেয়ার স্কাউটিং তত্ত্বাবধান করেন।
সিলেক্টর শ্রীধরন শরৎ কোনোদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেননি। তার মানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার ছক্কা নেই। শ্রীধরন ১০০টির বেশি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন। তিনি সাউথ জোনকে প্রতিনিধিত্ব করেন অর্থাৎ দক্ষিণাঞ্চলের প্লেয়ারদের সম্পর্কে ধারণা রাখেন। সেখান থেকে প্লেয়ার স্কাউটিং তার কাজ। সিলেক্টর সুব্রত ব্যানার্জি জীবনে একটা টেস্ট খেলেছেন। কিন্তু তার আসল কারিশমা হলো, তিনি দীর্ঘদিন ভারতের ইস্ট জোন নিয়ে কাজ করেছেন, কোচিং করিয়েছেন। ইস্ট জোনের প্লেয়ারদের তিনি ভালো চেনেন, সেই অনুযায়ী স্কাউটিং করেন।
সিলেক্টর শিভ সুন্দর দাস ২৩টা টেস্ট খেলেছেন। তবে তাকে নেয়ার অন্যতম ক্রাইটেরিয়া হলো, তিনি ভারতের সেন্ট্রাল জোনে কোচিং করিয়েছেন অনেক দিন। এই অঞ্চলের প্লেয়ারদের তিনি চেনেন বেশ ভালো। সিলেক্টর অজিত আগারকার চিফ সিলেক্টর হিসেবে আছেন। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এই টিমের সব থেকে হাই প্রোফাইল ক্রিকেটার। তবে চিফ সিলেক্টর হওয়ার পেছনে কাজ করেছে ভারতের ওয়েস্ট জোনের প্লেয়ারদের ভালোভাবে চেনা ও জানা।
আইপিএলে দিল্লি দলের সাথে কাজ করার সুবাদে স্কাউটিংয়ে যুক্ত ছিলেন তিনি। তবে আগারকারের সিলেকশনের সময় ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের (বিসিসিআই) উপদেষ্টা কমিটি একটা মজার বিষয় উল্লেখ করেছে। তা হলো– আগারকার নিয়মিত ধারাভাষ্য করেন। কমেন্টেটররা অন্য অনেকের চাইতে বেশি প্লেয়ার চেনেন। প্লেয়ারদের পটেনশিয়ালও তারা আগেভাগে জানেন।
সাদা বলের ফরম্যাটে বিশ্বসেরা ক্রিকেট দলের সিলেক্টর নির্বাচন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রোফাইল অনুযায়ী হয় না। কে কয়টা ছক্কা মেরেছেন, সেটাও বিবেচ্য হয় না। ভারত একটা সুন্দর ক্রাইটেরিয়া সেট করেছে। অঞ্চলভিত্তিক প্লেয়ারদের যারা ভালো চেনে, ভালো বোঝে, তাদেরর ওপর বেইজ করে ন্যাশনাল সিলেক্টর ঠিক করা হয়।
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ব্যাপারটা কেমন? আপনি প্রশ্ন করেন, কোন সিলেক্টর কয়টা ছক্কা মেরেছে? আপনি এই প্রশ্ন করেন না, সিলেক্টর নির্বাচনের ক্রাইটেরিয়া কী? তারা কয়জন প্লেয়ারকে চেনেন? অঞ্চলভিত্তিক কাজগুলো ভাগ করা হয় কি না?
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) একটা বড় পাইপলাইন হলো এইজ লেভেল (বয়স ভিত্তিক) ক্রিকেট। এইজ লেভেল ক্রিকেটে যারা কাজ করেন, তারা প্লেয়ারদের সম্পর্কে ভালো জানেন। আমরা হান্নান সরকারের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা দেখেছি। কিন্তু আমি আপনাকে দিব্যি দিয়ে বলছি— এইজ লেভেলে দীর্ঘদিন কাজ করা সাজ্জাদুল আলম শিপনকে যদি সামনে সিলেকশন প্যানেলে আনা হয়, আপনি প্রথম প্রশ্ন করবেন, ‘কয়টা আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন উনি? কয়টা ছয় মেরেছেন?’
আপনি এটা দেখবেন না, তিনি কত বছর বাংলাদেশের গেম ডেভেলপমেন্টে কাজ করেছেন অথবা কতজন প্লেয়ারকে চেনেন। আমি সাজ্জাদুল আলম শিপনের নাম উদাহরণ স্বরূপ আনলাম। এরকম গেম ডেভেলপমেন্টে দীর্ঘদিন কাজ করছেন এহসানুল হক সেজান, হাসিবুল হোসেন শান্তরা।
এটা ম্যাটার করে না, সেজান ভাইরা কয়টা ছয় মেরেছেন? ম্যাটার করে, তারা আপকামিং কয় জেনারেশনের প্লেয়ার চেনেন। নয়তো ভারত দলের সিলেক্টর থাকতেন শচীন টেন্ডুলকার, ইয়ুভরাজ সিং কিংবা ভিরেন্দর সেহওয়াগরা।
আয়শা/১৯ আগস্ট ২০২৫/রাত ১১:০৮