আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে ‘শান্তিকামী প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে আখ্যা দেন। তার দাবি, মার্কিন প্রশাসন বিশ্বজুড়ে নানা সংঘাত নিরসনে ভূমিকা রেখেছে। উদাহরণ হিসেবে ভারত–পাকিস্তান, থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়া, ইসরাইল–ইরান এবং বর্তমানে রাশিয়া–ইউক্রেনের শান্তি প্রক্রিয়ার কথা বলা যায়।
শুল্কযুদ্ধের রণনীতি
ট্রাম্পের শান্তি প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা তার পররাষ্ট্রনীতিতে খুব বেশি প্রতিফলিত হয়নি বরং তিনি অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে ভারত ও চীনের মতো দেশকে মার্কিন স্বার্থে নত করাতে চান। চীনের সঙ্গে এই দ্বন্দ্ব শুরু হয় পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ দিয়ে। ২০২৫ সালের প্রথম দিকে মনে হচ্ছিল এই শুল্কযুদ্ধের শেষ নেই। বর্তমানে চীনা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫৫% শুল্ক কার্যকর, আর মার্কিন পণ্যের ওপর চীনে প্রায় ৩২% শুল্ক বসানো হয়েছে। উভয় দেশের হাতে ১২ আগস্ট পর্যন্ত সময় আছে নতুন সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য, নইলে ভোক্তা ও উৎপাদক উভয়ই বড় ক্ষতির মুখে পড়বে।
রাহুল গান্ধীকে ছেড়ে দিল দিল্লি পুলিশ
যে চীনকে একসময় ট্রাম্প বলেছিলেন ‘বিশ্বের ইতিহাসের অন্যতম বড় চোর’, এখন তার প্রতিই নরম সুরে কথা বলছেন তিনি। সম্প্রতি ট্রাম্প বলেছেন, তার আরোপিত ১৪৫% শুল্ক ‘অত্যধিক’ ছিল এবং চীনের সঙ্গে ‘ভালো চুক্তি’ সম্ভব।
এ বছর মে, জুন ও জুলাই মাসে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এবং চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী হে লিফেং—স্টকহোম ও লন্ডনে একাধিক বৈঠক করেছেন। মে মাসে তারা ৯০ দিনের শুল্কবিরতির চুক্তিতে পৌঁছান এবং পরবর্তী আলোচনায় উভয় পক্ষের সম্ভাব্য ছাড় ও বিনিময় শর্ত নিয়ে আলোচনা হয়।
ভারতের ক্ষেত্রে চিত্র একেবারে উল্টো। যুক্তরাষ্ট্র ৫০% শুল্ক বসিয়ে স্পষ্টতই কড়া বার্তা দিয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ২৫% এসেছে ভারতের বাজার আমেরিকান পণ্যের জন্য যথেষ্ট উন্মুক্ত নয়—বিশেষত দুগ্ধ, মাছ ও কৃষিপণ্যে—এই অভিযোগে। বাকি ২৫% শুল্ক এসেছে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রাখার শাস্তি হিসেবে। প্রথম শুল্ক কার্যকর হয়েছে ৭ আগস্ট, আর ২৭ আগস্টের মধ্যে সমাধান না হলে বাড়তি শুল্কও কার্যকর হবে।
চীনের প্রতি নমনীয়তার কারণ
চীনের প্রতি ট্রাম্পের মনোভাব নরম হওয়ার পেছনে তিনটি কারণ থাকতে পারে—
ভারতের প্রতিক্রিয়া
ভারত কিন্তু চুপ নেই। ৬ আগস্ট মস্কোতে অনুষ্ঠিত ‘ভারত–রাশিয়া ওয়ার্কিং গ্রুপ অন মডার্নাইজেশন অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল কো-অপারেশন’-এর বৈঠকে দুই দেশের কৌশলগত অংশীদারিত্ব পুনর্ব্যক্ত করেছে। তার আগের দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে চীনের তিয়ানজিন সফরের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জাতীয় স্বার্থে কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন ও বহুমুখী অংশীদারত্ব বজায় রাখা ভারতের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার পথও খোলা রাখতে হবে। অবিলম্বে ছাড় দেওয়ার প্রয়োজন নেই, তবে বাজার উন্মুক্তকরণ ও সরবরাহ শৃঙ্খল সুরক্ষা নিয়ে আলোচনার ধারাবাহিকতা জরুরি।
যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অতীতেও ওঠানামা করেছে। তবে এবারের চ্যালেঞ্জ শুধু কূটনৈতিক নয়—দেশের অভ্যন্তরীণ সংস্কারও সমান জরুরি।
(লেখকের পরিচয়: আনুষ্কা সাক্সেনা ভারতের তক্ষশীলা ইনস্টিটিউশনের ইন্দো-প্যাসিফিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের একজন গবেষণা বিশ্লেষক।)
*এনডিটিভি থেকে অনূদিত
আয়শা/১১ আগস্ট ২০২৫/রাত ১০:৪৪