ডেস্ক নিউজ : জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেছেন, রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে শিগগিরই জুলাই সনদের চূড়ান্ত ঘোষণা হবে।
খসড়ায় বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শাসকগোষ্ঠীর প্রতিহিংসার শিকার হয়ে শিশু, নারীসহ ১ হাজার ৪০০-এর বেশি নিরস্ত্র নাগরিক নিহত এবং ২০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
খসড়ায় ‘১ হাজার ৪০০-এর বেশি’ নিরস্ত্র নাগরিক নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হলেও গত রবিবার রাতে সরকার এক প্রজ্ঞাপনে জানিয়েছে যে, এই সংখ্যা ৮৩৬। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে ‘শহিদদের’ তালিকা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় গত জানুয়ারিতে যে গেজেট প্রকাশ করেছিল, তাতে মোট ৮৪৪ জনের নাম ছিল। এখন আটজনের নাম বাদ দিয়ে শহিদের সংখ্যা ৮৩৬ জানিয়ে এই প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। জুলাই জাতীয় সনদের খসড়া এবং সরকারের হালনাগাদ প্রজ্ঞাপনে শহিদের সংখ্যা নিয়ে দুই রকম তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে এ ব্যাপারে জবাব দেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘১ হাজার ৪০০ সংখ্যাটি আমরা জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে নিয়েছি। গত ১২ ফেব্রুয়ারি এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।’প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা সংখ্যার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘সরকার সরকারের মতো করে করেছে। কিন্তু আমরা জাতিসংঘের প্রতিবেদন থেকে নিয়েছি।’
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় থেকে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে ১ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে এবং বাংলাদেশ পুলিশ জানিয়েছে যে, তাদের ৪৪ সদস্য নিহত হয়েছেন।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ১০ দিন পর ১৫ আগস্ট পর্যন্ত তথ্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তার মানে এই সময়ে নিহত হওয়া আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী এবং ৪৪ জন পুলিশ সদস্যও এই হিসাবের মধ্যে আছেন। আপনাদের খসড়া বাস্তবায়ন হলে তারাও স্বীকৃতি পাবেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি আবারও মনে করিয়ে দিয়ে বলেন যে, ‘আমরা সংখ্যাটি জাতিসংঘের প্রতিবেদন থেকে নিয়েছি।’
উল্লেখ্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের অনুরোধে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে একটি দল পাঠিয়েছিল, যার মধ্যে মানবাধিকার অনুসন্ধানকারী একজন ফরেনসিক চিকিৎসক ও একজন অস্ত্র বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তাদের প্রস্তুত করা জাতিসংঘের এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যখন সাবেক সরকার দেশের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করেছিল, তখন সংঘটিত প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড এবং পরে আওয়ামী লীগ কর্মী ও সমর্থক, পুলিশ এবং মিডিয়াকে লক্ষ্য করে করা অন্যান্য গুরুতর প্রতিশোধমূলক সহিংসতার ঘটনাগুলোও নথিভুক্ত করা হয়েছে এতে।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে গণ-অভ্যুত্থানকে সফল করতে যেসব ছাত্র-জনতা সক্রিয়ভাবে আন্দোলনের মাঠে থেকে এর পক্ষে কাজ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ওই বছরের ১৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সংগঠিত গণ-অভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট ঘটনার জন্য কোনো মামলা, গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না।
আয়শা/৯ আগস্ট ২০২৫/সন্ধ্যা ৭:৫০