আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তাইওয়ানের গণমাধ্যমের সরাসরি ভোট গণনার তথ্য অনুযায়ী, শনিবার (২৬ জুলাই) স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় ভোট শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই জানা যায় যে, বিরোধী দল কুওমিনতাং (কেএমটি)-এর ২৪ জন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে আনা সব রিকল ভোট প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম লাই-এর ডেমোক্রেটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টি (ডিপিপি)-সমর্থিত নাগরিক সংগঠনগুলো এসব এমপিদের অপসারণের জন্য এই রিকল প্রচারণা চালিয়েছিল। তারা অভিযোগ করে, কেএমটি চীনের সঙ্গে আঁতাত করছে। চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পক্ষে থাকা কেএমটি তাইওয়ানের সংসদে তাইওয়ান পিপলস পার্টির (টিপিপি) সহায়তায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রেখেছে। দলটি এই নজিরবিহীন রিকল প্রচেষ্টাকে ‘ডিপিপির ক্ষমতা দখলের প্রচেষ্টা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
কেএমটি চেয়ারম্যান এরিক চু বলেন, ‘এই রাজনৈতিক প্রহসন এখানেই শেষ হোক।’তিনি আরও বলেন, ‘কেউ যদি নির্বাচনে হারেই যায়, তারপর প্রতিহিংসামূলক রিকল প্রচারে নামা উচিত নয়। তিনি প্রেসিডেন্ট লাইকে ‘সত্যিকারের ক্ষমা প্রার্থনার’ আহ্বান জানান এবং ‘রাজনৈতিক কলহ থেকে বেরিয়ে আসার’ পরামর্শ দেন। ডিপিপি পক্ষ থেকে বলা হয়, নির্বাচনকে শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলের জয়-পরাজনের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত নয়। দলটি সমাজের প্রতিক্রিয়া নিয়ে আরও ‘গভীরভাবে আত্মসমালোচনা’ করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
ডিপিপি যদি অন্তত ১২ জন কেএমটি সাংসদকে অপসারণ করতে পারতো, তাহলে তারা সাময়িকভাবে সংসদের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারতো। ঝুঁকি বিশ্লেষণ সংস্থা ইউরেশিয়া গ্রুপ এই সম্ভাবনাকে ৬০% বলেছিল। এরপর ডিপিপিকে উপনির্বাচনে আরও ছয়টি আসন জিততে হতো, যাতে ১১৩ আসন বিশিষ্ট তাইওয়ান সংসদে স্থায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রতিষ্ঠা করা যায়। আরও সাতজন কেএমটি এমপির বিরুদ্ধে রিকল ভোট হবে আগামী ২৩ আগস্ট। এই গুরুত্বপূর্ণ ভোটকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিনে ডিপিপি ও কেএমটি—উভয় পক্ষই সমাবেশ করেছে। এই ভোট মাসের পর মাস ধরে তাইওয়ানের রাজনীতি, পত্রিকার শিরোনাম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ছিল।
যদিও গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন জিতে প্রেসিডেন্ট হন লাই, তবে ডিপিপি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়। এর ফলে বিরোধী দল সংসদে তাদের ক্ষমতা দেখাতে শুরু করে এবং সরকারের বিরোধিতার মধ্যেই বিভিন্ন আইন পাস করে ও বাজেট কাটছাঁট করে। বিশেষ করে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর সরকারি পরিকল্পনা এতে বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
তাইওয়ান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের হুমকির মুখে সামরিক বাজেট বাড়ানোর চেষ্টা করছে। চীন তাইওয়ানকে তাদের নিজস্ব এলাকা হিসেবে দাবি করে। এই অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই চীন সামরিক ও কূটনৈতিক চাপ বাড়িয়ে যাচ্ছে, যা প্রেসিডেন্ট লাই ও তার সরকার প্রত্যাখ্যান করেছে। লাই চীনের সঙ্গে একাধিকবার সংলাপের প্রস্তাব দিলেও বেইজিং তা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তাকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
এই উত্তপ্ত রিকল নির্বাচন ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছিল চীন। চীনের তাইওয়ান বিষয়ক দফতর এবং রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম কেএমটির বক্তব্য ব্যবহার করে লাই-এর সমালোচনা করেছে। তাইপে সরকারের পক্ষ থেকে এই সপ্তাহে জানানো হয়, বেইজিং স্পষ্টভাবে এই ভোটে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেছে এবং কে এমপি থাকবে আর কে থাকবে না—সেই সিদ্ধান্ত তাইওয়ানের জনগণের হাতে থাকা উচিত।
রিকল ভোটে সমর্থনকারীরা অভিযোগ করে যে, কেএমটি তাইওয়ানকে বিক্রি করে দিচ্ছে—চীনে এমপি পাঠাচ্ছে, প্রতিরক্ষা ব্যয়ের বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে এবং সংসদে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। কেএমটি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এবং লাই-এর নেতৃত্বকে ‘স্বৈরতান্ত্রিক’ এবং ‘সবুজ সন্ত্রাস’ বলে আখ্যা দেয়—যেখানে ‘সবুজ’ বোঝাতে ডিপিপির দলের রঙ ব্যবহার করা হয়েছে।
সূত্র: আল জাজিরা।
কিউটিভি/আয়শা/২৬ জুলাই ২০২৫,/রাত ১১:৩০