আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া অবৈধভাবে ভারতীয় বাঙালি মুসলমানদের বাংলাদেশে পুশইন বন্ধ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। সাম্প্র্রতিক সময়ে ভারতের ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকার শত শত ভারতীয় মুসলমানকে বাংলাদেশে পুশইন করেছে বলে বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এইচআরডব্লিউ জানিয়েছে।
এতে বলা হয়, ২০২৫ সালের মে থেকে ভারতের স্থানীয় বাঙালি মুসলিমদের বাংলাদেশে বহিষ্কারের (পুশইনের) অভিযান জোরদার করেছে হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার। আইনি অনুমোদন ছাড়া ভারতে প্রবেশে নিরুৎসাহিত করতে এ উদ্যোগ বলে জানায় সরকার। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া পরিচালক অ্যালেইন পিয়ারসন বলেছেন, ‘সরকারের অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের দাবি অগ্রহণযোগ্য, কারণ তারা যথাযথ প্রক্রিয়া, অভ্যন্তরীণ নিশ্চয়তা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডকে উপেক্ষা করছে।’ এ সময় স্থানীয় বাঙালি মুসলিমদের (যাদের মধ্যে ভারতীয় নাগরিকরাও রয়েছে) দেশ থেকে বহিষ্কার করে বৈষম্যকে উসকে দিচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জুন মাসে ১৮ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। সাক্ষাৎকার নেওয়াদের মধ্যে এমন ভারতীয় নাগরিকও রয়েছেন, যারা বাংলাদেশে বহিষ্কৃত হওয়ার পর ভারতে ফিরে এসেছেন এবং তাদের পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন, যারা এখনো নিখোঁজ। ৮ জুলাই হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বিস্তারিত জানতে চেয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে, কিন্তু এর কোনো উত্তর পায়নি।
ভারত সরকার বহিষ্কৃত নাগরিকদের সংখ্যার বিষয়ে কোনো সরকারি তথ্য দেয়নি। তবে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীবাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ জানিয়েছে, ৭ মে থেকে ১৫ জুনের মধ্যে ভারত ১ হাজার ৫০০ জনের বেশি মুসলমান পুরুষ, নারী ও শিশুকে বাংলাদেশে পুশইন করেছে। এদের মধ্যে মিয়ানমারের ১০০ রোহিঙ্গা শরণার্থীও রয়েছে।
এইচআরডব্লিউ-এর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিজেপিশাসিত রাজ্য আসাম, উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, ওড়িষা এবং রাজস্থানের কর্তৃপক্ষ মুসলমানদের (যাদের অধিকাংশই দরিদ্র অভিবাসী শ্রমিক) আটক করেছে এবং ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের কাছে হস্তান্তর করেছে। কিছু ক্ষেত্রে, সীমান্তরক্ষীরা অভিযোগ অনুযায়ী আটকদের হুমকি দিয়েছে এবং মারধর করেছে, যাতে তারা তাদের নাগরিকত্বের দাবি পর্যাপ্তভাবে যাচাই না করেই বাংলাদেশে প্রবেশে বাধ্য হয়। অবশ্য কয়েকজন নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পারায় ভারত সরকার কয়েক ডজন মানুষকে পুনরায় দেশে ফিরতে দিতে বাধ্য হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত এপ্রিলে জম্মু-কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলার পর এই দমনপীড়ন শুরু হয়। পুলিশ মুসলমানদের হয়রানি করতে শুরু করে, তাদের নাগরিকত্বের দাবি গ্রহণ করতে অস্বীকার করে এবং তাদের ফোন, নথি ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র জব্দ করে। ফলে তারা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি।
আটকদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছেন, বিএসএফ কর্মকর্তারা তাদের হুমকি দিয়েছে ও আক্রমণ করেছে এবং কয়েকটি ক্ষেত্রে বন্দুকের মুখে তাদের সীমান্ত অতিক্রম করতে বাধ্য করেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৮ মে সরকারি পদ্ধতি অনুসারে পরামর্শ এবং যাচাই-বাছাই ছাড়াই সীমান্ত দিয়ে ‘পুশ ইন’ বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে। এতে বলা হয় বাংলাদেশি নাগরিক নিশ্চিত হলে এবং নির্ধারিত চ্যানেল অনুসরণ করা হলেই কেবল কাউকে গ্রহণ করা হবে।
এইচআরডব্লিউ বলছে, নির্ধারিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাউকে আটক বা দেশ থেকে বিতাড়িত করা মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। কাউকে বিতাড়িত করতে চাইলে ভারত সরকারকেই তার মৌলিক অধিকার সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
কিউটিভি/আয়শা/২৫ জুলাই ২০২৫,/বিকাল ৪:১৫