ডেস্ক নিউজ : ইসলামের পবিত্রতম শহর মক্কা। এর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য মসজিদে হারামের বাইরেও বিস্তৃত। মক্কা নগরজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ঐতিহাসিক মসজিদগুলো ইসলামের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। কিন্তু বর্তমান সময়ের মানুষ তা ভুলতে বসেছে। হজ ও উমরা পালনকারীর সংখ্যা বাড়ছে, মক্কা নগরের উন্নয়ন হচ্ছে গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে।
কিন্তু ইতিহাস অনুসন্ধানী মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমছে। এ কারণে অনেক হজ ও উমরা পালনকারী এই পবিত্র স্থানগুলো সম্পর্কে অবগত নন। যে স্থাপনাগুলো ক্রমবর্ধমান আধুনিক নগরের মধ্যে চাপা পড়ে আছে। হারাতে বসছে এসবের ইতিহাস।
মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক ফাওয়াজ আল-দাহাস বলেন, ‘মক্কায় ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধসম্পন্ন বেশ কয়েকটি মসজিদ রয়েছে। বলা চলে এগুলো অনেকটাই উপেক্ষিত রয়ে গেছে, নানা কারণে সেগুলো পরিদর্শনের সুযোগ কম, এ কারণে মিডিয়ার মনোযোগ নেই। দিন দিন সেগুলোর কথা ভুলতে বসেছে এই প্রজন্ম।’
আল-দাহাস আরাফাতের ময়দানের নামিরা মসজিদের তাৎপর্য তুলে ধরেন, যেখানে নবী কারিম (সা.) বিদায় হজের সময় খুতবা দিয়েছিলেন। তিনি বলেন যে, মসজিদটি কেবল একটি ভৌগোলিক কাঠামো ছিলো না, বরং একটি পবিত্র স্থান- যেখানে ইসলামের মূলনীতি ঘোষণা করা হয়েছিল।’
তিনি মিনায় অবস্থিত বায়আত মসজিদের কথাও উল্লেখ করেন, যা আনসারদের নবীর প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকারের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তকে স্মরণ করে, হিজরত এবং ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করে।
আল-দাহাসের মতে, এই মসজিদগুলোর গুরুত্ব তাদের ভৌগোলিক অবস্থানকে ছাড়িয়ে যায়, যা ইসলামের ইতিহাসে তাদের গভীর রাজনৈতিক ও ধর্মীয় তাৎপর্য প্রতিফলিত করে।
আল-দাহাস আল-রায়াহ মসজিদ সম্পর্কে আলোকপাত করে বলেন, ‘জারওয়াল পাড়ায় অবস্থিত, যেখানে মক্কা বিজয়ের দিন নবীর পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল, যা ক্ষমার দ্বারা মসৃণ বিজয়ের একটি শক্তিশালী প্রতীক।’
তিনি মক্কার পশ্চিমে অবস্থিত আল-হুদাইবিয়া মসজিদের দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, যেখানে ঐতিহাসিক বায়াতে রিদওয়ান অঙ্গীকার সংঘটিত হয়েছিল, পবিত্র কোরআনে উল্লেখিত একটি ঘটনা। তিনি বলেন, মসজিদটি এখনও হুদাইবিয়া চুক্তির মূল স্থানে অবস্থিত, তবে এটি মূলত অজানা রয়ে গেছে, খুব কম দর্শনার্থীই এর সঠিক অবস্থান সম্পর্কে অবগত।
হজ ও উমরা বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ আল-জুদ বলেন যে, ‘এই মসজিদগুলো কেবল ঐতিহাসিক স্থাপনা নয়, বরং গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষামূলক নিদর্শন, যা হজের গভীর আধ্যাত্মিক দিক সম্পর্কে একজন হজযাত্রীর ধারণাকে সমৃদ্ধ করে।’
তিনি মিনার আল-খায়েফ মসজিদের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘যেখানে নবী কারিম (সা.) এবং তার পূর্ববর্তী নবীরা নামাজ পড়েছেন, নবুওয়তের ধারাবাহিকতার একটি শক্তিশালী প্রতীক হিসেবে, ‘তবুও অনেক হজযাত্রী হজের মৌসুমের বাইরে এর তাৎপর্য সম্পর্কে জানেন না।’
আল-জাউদ পবিত্র কোরআনে উল্লেখিত মুজদালিফার আল-মাশায়েরে হারাম মসজিদের কথা তুলে ধরে জোর দিয়ে বলেন যে, এই পবিত্র স্থানগুলোর সচেতনতা হজের আচার-অনুষ্ঠানকে তাদের কোরআন ও ঐতিহাসিক শিকড়ের সঙ্গে সংযুক্ত করে, যা আধ্যাত্মিক যাত্রাকে উন্নত করে।
আল-জাউদ হজরত ইসমাইল (আ.)-এর কোরবানির সঙ্গে যুক্ত মিনার আল-কাবশ মসজিদের দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, মসজিদটি ত্যাগ এবং আনুগত্যের মূল্যবোধের প্রতীক, এখানে আল্লাহর নির্দেশে নিজের ছেলের গলায় ছুঁড়ি চালিয়েছেন এক পিতা। মিডিয়া কভারেজের ক্ষেত্রে এটি মূলত উপেক্ষিত এবং বেশিরভাগ হজযাত্রীর জিয়ারা (পরিদর্শন) কর্মসূচি থেকে বাদ পড়ে। কৃর্তপক্ষও স্থানটিতে পরিদর্শন করতে দেন না পাহাড়ের চূড়ায় হওয়ার কারণে।
তিনি এটাকে পবিত্র স্থানগুলোর একটি বৃহত্তর, আন্তঃসংযুক্ত নেটওয়ার্কের একটি অপরিহার্য অংশ হিসাবে বর্ণনা করেন। যা ভবিষ্যদ্বাণীমূলক যাত্রার সন্ধান করে- অহি থেকে হিজরত এবং শান্তি থেকে বিজয় পর্যন্ত। আল-দাহাস এই মসজিদগুলোর ওপর আলোকপাত এবং তাদের পুনরুদ্ধারের জন্য সচেতনতামূলক উদ্যোগ গ্রহণের গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, মক্কার ইসলামি ঐতিহ্য রক্ষা করা কেবল এর বিশিষ্ট স্থানগুলো সংরক্ষণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই মসজিদগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করাও প্রয়োজন।
তিনি বলেন, এই পবিত্র স্থানগুলোর সঙ্গে হজযাত্রীদের সংযোগ স্থাপন হজের শিক্ষাগত এবং ঐতিহাসিক গভীরতাকে পুনরুজ্জীবিত করবে, যা তার হজযাত্রাকে আরও গভীর, তথ্যবহুল এবং আধ্যাত্মিকভাবে নিমজ্জিত অভিজ্ঞতা দিয়ে সমৃদ্ধ করতে সহায়তা করবে।
কিউটিভি/আয়শা//২৬ জুন ২০২৫, /দুপুর ১:১৮