ডেস্ক নিউজ : বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ, সহিংসতা ও নিপীড়নের কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, ২০২৫ সালের এপ্রিল শেষে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ১০ লাখে, যা এক দশকে সর্বোচ্চ।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেন, আমরা এখন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এক অস্থির সময়ে বাস করছি, যেখানে আধুনিক যুদ্ধ এক ভঙ্গুর ও মর্মান্তিক মানবিক সংকট তৈরি করেছে। শরণার্থী ও বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য শান্তিপূর্ণ ও টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে আমাদের আরও বেশি প্রচেষ্টা দরকার।
রিপোর্টে বলা হয়, ২০২৪ সালের শেষে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ৬৩ লাখ বেড়ে দাঁড়ায় সাত কোটি ৩৫ লাখে। অন্যদিকে নিজ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া শরণার্থীর সংখ্যা চার কোটি ২৭ লাখ।
বিশ্বজুড়ে এখন সবচেয়ে বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষ রয়েছে সুদানে, যেখানে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত ও শরণার্থীর সংখ্যা এক কোটি ৪৩ লাখ। এর পরেই রয়েছে সিরিয়া (এক কোটি ৩৫ লাখ), আফগানিস্তান (এক কোটি ৩ লাখ) ও ইউক্রেন (৮৮ লাখ)।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, অধিকাংশ শরণার্থী ধনী দেশগুলোর পরিবর্তে প্রতিবেশী বা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতেই আশ্রয় নিচ্ছেন। বর্তমানে ৬৭ শতাংশ শরণার্থী প্রতিবেশী দেশগুলোতে এবং ৭৩ শতাংশ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে অবস্থান করছেন। বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে ৬০ শতাংশ তাদের দেশের অভ্যন্তরেই রয়ে গেছেন।
ইউএনএইচসিআর জানায়, গত এক দশকে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। অথচ সংস্থাটির মানবিক তহবিল এখনো ২০১৫ সালের মতোই রয়ে গেছে। ফলে চলমান ব্যয় সংকোচন শরণার্থী ও বাস্তুচ্যুতদের আরও ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
তবে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তনও দেখা যাচ্ছে। গ্রান্ডি বলেন, সংকোচনের মধ্যেও আমরা গত ছয় মাসে আশার কিছু আলো দেখেছি। এক দশকেরও বেশি সময় পরে প্রায় ২০ লাখ সিরীয় তাদের দেশে ফিরতে পেরেছেন। যদিও দেশটি এখনও ভঙ্গুর, তাদের জীবন পুনর্গঠনে আমাদের সহায়তা প্রয়োজন।
২০২৪ সালে মোট ৯৮ লাখ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষ নিজ দেশে ফিরে গেছেন, যার মধ্যে ১৬ লাখ শরণার্থী (গত দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ) এবং ৮২ লাখ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত (এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ)।
তবে অনেক প্রত্যাবর্তনই হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্য দিয়ে। যেমন, বিপুল সংখ্যক আফগান নাগরিককে ২০২৪ সালে দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় আফগানিস্তানে ফিরতে বাধ্য করা হয়। একইভাবে কঙ্গো, মিয়ানমার ও দক্ষিণ সুদানে যেমন নতুন করে বাস্তুচ্যুতি ঘটেছে, তেমনই অনেকে ফিরে গেছেন নিজ দেশে।
রিপোর্টে ইউএনএইচসিআরের জীবন রক্ষাকারী কর্মসূচিগুলোর জন্য নিয়মিত অর্থায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে। এসব কর্মসূচি দেশে ফিরে আসা শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের সহায়তা করে, পাশাপাশি আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়ের মৌলিক অবকাঠামো ও সামাজিক সেবা শক্তিশালী করে। যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
কিউটিভি/আয়শা/১২ জুন ২০২৫, /বিকাল ৫:৫৮